দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রার্থনা
- By Jamini Roy --
- 07 December, 2024
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সামরিক আইন জারির আকস্মিক ঘোষণার পর বিরোধিতা এবং রাজনৈতিক সংকটের মুখে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। গত মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাতের এই ঘোষণার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং অভিশংসনের দাবি ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত সামরিক আইন প্রত্যাহার করলেও, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের চাপ বেড়েছে। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই ঘটনা জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
তবে সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্তের পেছনে প্রেসিডেন্ট ইউনের যুক্তি ছিল উত্তর কোরিয়ার হুমকি এবং রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান নির্মূল করা। তিনি বলেন, "প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেকটা মরিয়া হয়ে আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু এটি জনগণের উদ্বেগ বাড়িয়েছে এবং তাদের অসুবিধায় ফেলেছে। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।"
সামরিক আইন জারির পর রাজনৈতিক উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ক্ষমতাসীন দলের ভেতরেও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। আইনপ্রণেতারা তার এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন এবং বিরোধী দলগুলো অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী দলগুলো দফায় দফায় জরুরি বৈঠক করেছে। পার্লামেন্টে শনিবার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। পার্লামেন্টের ৩০০ সদস্যের মধ্যে ১৯০ জন সামরিক আইনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে ইতোমধ্যেই প্রেসিডেন্টের অবস্থান দুর্বল করে দিয়েছেন।
পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি), যা প্রেসিডেন্ট ইউনের নিজের দল, তারাও এখন তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। দলের প্রধান হান ডং-হুন বলেছেন, "প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইউনের থেকে যাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।" বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্টের নিজের দল যদি তার বিরুদ্ধে চলে যায়, তাহলে অভিশংসন প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে।
সামরিক আইন জারির এই ঘটনার মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিউন তার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। মন্ত্রীর পদত্যাগও প্রেসিডেন্টের অবস্থানকে আরও দুর্বল করে তুলেছে।
টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইউন বলেন, "এই ঘোষণার ফলে যেকোনো আইনি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির দায় আমি এড়াতে পারি না। তবে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, দেশে আর কখনো সামরিক আইন জারি করা হবে না।"
সামরিক আইন জারির ঘোষণার ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখন গভীর সংকটে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ইউনের পদে থাকা ক্রমেই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। অভিশংসন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।